দু’টো মানুষ আর স্বপ্নের চেষ্টা

দ্বৈপায়ন মজুমদার



ভাই তুমি স্বপ্ন দেখ । কি দেখ, কেন দেখ । এই প্রশ্নগুলৠদিয়েই শুরু এবং শেষ । আর এর উত্তর ডিলান সাহেবের সেই বহু ব্যবহৃত ‘the answer my friend is blowing in the wind’ গান থেকে খুঁজতে যাওয়া মনে হয় ঠিক হবে না । আসলে ‘প্রশ্নগুঠ²à§‹ হয়ত সহজ আর কিন্তু উত্তর’ ??? না স্যার উত্তরটা ঠিক জানা নেই, মনে হয় কারুরই থাকে না । তবু দিন চলে, না চাইলেও স্বপ্ন আসে । কিছু স্বপ্ন আসে প্রথা মেনে, ওই শরীর বিদ্যার বইকে স্বীকৃতি দিয়ে । কঠিন কিছু নামের তকমা গায়ে মেখে । ‘রেম স্লিপ’, মানে গোদা বাংলায় সাধারণত ঘুমের যে সময় স্বপ্ন নেমে আসে । ঘুমের দেশে চোখের দ্রুত সঞ্চালনের (র্যা পিড আই মুভমেন্ট) সময় আসা স্বপ্নগুলৠতে থাকে না তেমন পুর্ব পরিকল্পনা । ঘুম ভাঙালে পর বেশিরভাগ সময় মন থেকে ভ্যানিশ । ভাল স্বপ্ন রেখে যায় আফসোস, ইসসস্‌ যদি সত্যি এমন হত । আর দুঃস্বপ্ন দিয়ে যায় চিন্তা, সত্যি এমন হবে না তো । এখন এই গল্পগুলো অনেকেটাই বহু চর্চিত । আর সত্যি বলতে কি ‘স্বপ্ন দেখতে শেখ, নিজের স্বপ্নকে পূরণ কর’ মার্কা কথা বার্তা কিন্তু এই ঘুম দেশের স্বপ্নগুলৠকে নিয়ে তৈরি হয়নি । তৈরি হয় জেগে থেকে যে কল্পনার জাল আমরা বুনতে থাকি, আমৃত্যু যেগুলো আমাদের সঙ্গে থাকে সেই কল্পনার জগতকে স্বপ্ন তকমা দিতে অভ্যস্থ । তাই স্বপ্ন নিয়ে লিখতে বসলে দু’টো অসুবিধা কোন স্বপ্ন নিয়ে লিখব, আর কি কি নিয়ে লিখব । আর এই করেই লেখার ‘টাইম পিরিয়ড’ সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করে ।
স্বপ্ন দেখা বলতে আগামী দিনের ঝলমলে à¦‰à¦šà§à¦›à§à¦¬à¦¾à¦¸à§‡à ° সন্ধান । কিন্তু সত্যি কথাটা হল আজকের দিনে এই উপমহাদেশে দাঁড়িয়ে সত্যি কি তেমন কিছু স্বপ্ন দেখা সম্ভব ? মাঝ ঘুমে যে স্বপ্ন আসে প্রকৃতির নিয়মে, রাসায়নিক ক্রিয়ায়, তাও আজ ব্যাহত । প্রতিটা রাত যেন ‘ইস রাত কি শুভা নেহি’ । সব সময় একটা ভয়, â€˜à¦¬à¦¾à¦‡à¦¨à¦¾à¦°à¦¿â€™à ¦¤à§‡ ফেঁসে যাচ্ছি না তো ।
যদি সাহস করে বলা হয় কে কি খাবে এটা সরকার কোন মতেই ঠিক করতে পারে না, গরু একটি জাস্ট একটা প্রাণী, তার বাইরে অন্য কিছু নয়, তাহলে তকমা ‘অ্যান্টি ন্যাশনাল’ । যদি বলে ফেলি কাশ্মীরের পণ্ডিতদের উপর অন্যায় হয়েছে, আরও অন্যায় হয়েছে তামাম বুদ্ধিজীবৠদের মুখ ঘুরিয়া রাখা, তাহলে ‘চাড্ডি’ তকমা ঠেকায় কে । পাহাড়ে ঝামেলার সময় মন খারাপ হলে যদি মুখ ফসকে বেরিয়ে যায় অনেক হয়েছে বাবুদের জমিদারী, পাহাড় মানে শুধু সেলফি তোলা, বান্ধবীকে নিয়ে গিয়ে কনডম ফেলে আসা আর পাহাড়ি মানুষ মানেই ফ্ল্যাটের তলায় ‘ও সাবজি’ ডেকে খিদমত করার লোক নয়, ব্যাস তাহলেই হল, এতটা বলে ফেললে অবশ্যই ‘বাংলা বিরোধী’ ছাপ পারমানেন্ঠহয়ে যাবে । যদি বলে ফেলি বাংলা সিনেমার বেঁচে থাকার জন্য শহরের সব মাল্টিপ্লৠক্সে বাংলা সিনেমার অন্তত একটা শো রাখা একান্ত দরকার তাহলে আমি ‘প্রাদেশিঠ•â€™ । আসলে পোলারাইজ হতেই হবে, হয় তুমি সাদা না হলে কালো, হয় তুমি ট্রাম্প না হলে লাদেন, হয় তুমি মেসি না হলে রোনাল্ড, হয় তুমি ইলিশ না হলে চিংড়ি । যেন দু’টো খাবার, দু’টো খেলোয়াড় এক সাথে ভাল লাগতে পারে না, যেন দু’টো লোক এক সাথে খারাপ লাগা অসম্ভব । ক্রমশ আমার এই চেনা শহর, চেনা মানুষগুলো বড্ড অচেনা হয়ে যাচ্ছে । ধর্মতলায় এখন সবার উপরে ধর্ম সত্যি তাহার উপর নাথিং নাথিং নাথিং । ‘লিবারাল’ তকমার নামে যেটা চলছে সেটা ভণ্ডামো নামক কয়েনের আরেকটা দিক, তাই ‘লিবারাল’ তকমার স্বপ্ন আর দেখি না । তকমাটা আপাতত মিছিলে ‘হিন্দু, মুসলিম, শিখ, ঈসাই / আমরা সব ভাই ভাই’ স্লোগানধাঠ°à§€à¦¦à§‡à¦° থাক । যদিও খুব ইচ্ছে করে, একবার প্রশ্ন করি ‘শুধু ভাই ভাই কেনো, প্রেমিক-à¦ªà§à °à§‡à¦®à¦¿à¦•à¦¾, বর-বউ কেনো নয় ?’ এমন দিনে কি স্বপ্ন আসে, আসা সম্ভব ? এলেও তা রুপালী পর্দায় ‘চারমূর্তঠ¿â€™à¦° ‘ঘচাং ফু, খাবো তোকে’ টাইপের ।
তাহলে উপায় কি । স্বপ্ন ছাড়া বাঁচা আর অক্সিজেন ছাড়া বাঁচা সমার্থক । তখনই এমন ধূসর দিনে মনে পড়ে বিশেষ কিছু মানুষকে । এক জন সোচ্চারে জানিয়েছিল সে ‘ড্রিমার’, বলেছিল ‘ইম্যাজিন⠙ কর এমন এক দুনিয়া যেখানে দেশ, ধর্মের কোন সীমানা থাকবে না, থাকবে কোন স্বর্গ আর নরকের বিশ্বাস । তার পর আচমকা তাকে এক ডিসেম্বরেঠ° শীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঠাণ্ডা ঘরে, চিরদিনের জন্য । কিন্তু তা বলে তো জন লেননের স্বপ্নগুলৠভ্যানিস হয়ে যায় না । আসলে এই অসুস্থ সময়ে স্বপ্ন দেখার প্রসেসটাতৠহয়ত বদল আনতে হবে । একা একা স্বপ্ন দেখার চেষ্টা করাটা হয়ত ভুল হচ্ছে । এ সময়ে স্বর্গীয় সম্বল সেই লাইনগুলো, ‘A dream you dream alone is only a dream. A dream you dream together is reality’, আসলে সত্যিই তো, এ সময়ে একা স্বপ্ন দেখে কি লাভ । কিছু মানুষকে পাশে পেতে হবে যারা আমার তোমার স্বপ্নের পথিক না হলেও চলবে, কিন্তু অন্তত বোঝার চেষ্টা করবে, অথবা যুক্তি জালে শুধরে দেবে আমাকে, আমাদেরকে । চিন্তায়, স্বপ্ন দেখার রাস্তায় কিছু ভুল থাকতেই পারে, এমনকি সেটা â€˜à¦²à¦¿à¦¬à¦¾à¦°à¦¾à¦²â€™à ¦à§‡à¦°à¦“ থাকতে পারে ।
আবার আইরনি হল অন্য দুনিয়া তৈরির স্বপ্ন নিয়ে চলা মানুষ হয়ত অজান্তেই ভেঙে ফেলে তার চার দেওয়ালের কাছের কিছু মানুষের অনেক ছোটো-খাটো স্বপ্ন, সে খেয়ালও করে না । আসলে ‘অ্যাবসলিঠ‰à¦Ÿà¦²à¦¿ রাইট’ বলে হয়ত কিছু নেই । না হলে যার শেখানো লাইনগুলো থেকে স্বপ্নের উপাদান খুঁজে পাই, সেই জন লেনন হয়তো খুব কাছের কারুর স্বপ্ন ভাঙার কারণও ছিলেন । যৌবনে বিটলসের উদ্দামতায় যখন সারা বিশ্ব ভাসছে তখন সবার অলক্ষ্যে জন্ম নিয়েছিল জুলিয়ান । বাবাকে তেমন পায়নি সে, হয়ত জনপ্রিয় মানুষটি সারা বিশ্বকে স্বপ্ন দেখাতে গিয়ে কোথায় যেন জুলিয়ানের স্বপ্নের দিনগুলো থেকে একটু সরে ছিলেন । কেই বা চিনত জুলিয়ানকে । একা অভিমানে বেড়ে উঠেছিল সবার আড়ালে । বাবার নতুন সংসার, আলো ভরা জীবন থেকে অনেক অনেক দূরে । কেউ জানত না তেমন, ভরসা বলতে পল কাকুর (পল ম্যাকার্টঠি) ভালবাসা । তাই বড় হয়ে এক দিন মনের সব জ্বালা এক জায়গায় জড়ো করে বাবাকে ‘হিপক্রিট⠙ বলেছিল সে । জুলিয়ানের কথায় ‘Dad was a hypocrite. He could talk about peace and love to the world but he could never show it to his wife and son’ ।
তা বলে জন লেননের ‘ইম্যাজিন⠙ তো মিথ্যে হতে পারে না, মিথ্যে হতে পারে না চিন্তার স্তরগুলো । তাই স্বপ্ন দেখতে চাইলে বলতে ইচ্ছে করবেই ‘you may say I’m a dreamer but I’m not the only one’, আর কিছু না হোক স্বপ্নের জাল বোনার একটা চেষ্টা তো করা যাবে ।
আসলে কিছু মানুষের জীবনচর্যা, সময়, দেশ সব কিছু আলাদা হলেও কোথাও একটা তরঙ্গ কাজ করে । তাই কোথাও গিয়ে মহাত্মা আর জন যেন একই লাইনে দাঁড়িয়ে । আমার, আমাদের মত অনেক বাঙালি যাকে ছোটবেলা থেকে অপচ্ছন্দ করেছি (কারণ অবশ্যই সেই বাইনারি হয় সুভাষ না হলে মহাত্মা) সেই লোকটা বলে গিয়েছিল ‘justice that love gives is a surrender/ justice that law gives is a punishment’। আর ভালবাসার, শান্তির স্বপ্ন দেখানো মহাত্মা আর জনের শেষ à¦…à¦•à§à¦¸à¦¿à¦œà§‡à¦¨à§‡à ¦° দিনাটাতেও কেমন যেন ব্ল্যাক মিরাকেল, বারুদের গন্ধ থামিয়ে দিয়েছিল দুজনকেই, দু’টো আলাদা সময়ে, পৃথিবীর দু’প্রান্ঠ¤à§‡ । আবার কি রকম যেন সব গুলিয়ে যায়, যখন দেখি সেই মহাত্মার এক সন্তানও আজীবন বাবার উপর অভিমানে করে কাটাল, জীবনকে নিয়ে জুয়া খেলেছিল হরিলাল গান্ধী । হরিলালের জীবন থেকেই তৈরি হল ‘Gandhi my father’ । কে ঠিক, কে ভুল সে তর্ক থাক । কিন্তু কিছু স্বপ্নভঙ্ঠের সাক্ষী হয়ে ছিলেন মহাত্মা স্বয়ং, তাও নিজের বাড়িতে ।
এও এক অবাক ‘বাইনারি’, স্বপ আর স্বপ্নভঙ্ঠগুলো যেন হাত ধরাধরি করে চলে, চির সখা । তাই এ অবিন্যস্ত সময় যখন আমার চেনা মানুষদের খুব দ্রুত বদলে যেতে দেখছি, তখন এই লোকগুলোর দেখান স্বপ্ন আর এদের আসে পাশের জুলিয়ান, হরিলালের মত মানুষদের স্বপ্ন ভাঙার কথাও ভীষণ ভাবে মনে পড়ে, তবুও এর মধ্যেই কোথায় যেন একটা আলো দেখতে পাই । মনে হয় হয়ত স্বপ্ন ভাঙা তো থাকবেই, তার মধ্যেও থাকবে কিছু ফিনিক্স । কেউ হয়ত আবার বলবে ‘Give peace a chance’….অন্তত একটা সুযোগ দাও ।